পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কৌশল গুলো বিস্তারিত জানুন
আপনি নিশ্চয়ই পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কৌশল নিয়ে খুবই চিন্তিত আছেন! আপনি এটাও ভাবছেন যে কিভাবে পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখা যায়? সম্মানিত পাঠক চিন্তার কোন কারণ নাই, কেননা সমস্যা যেখানে আছে সমাধানও আছে। আজ প্রতিটি পরিবারের ছোটখাটো অশান্তি বিরাজমান।
আর আমরা হলাম তো সাধারণ মানুষ। অতএব আমাদের পরিবারিক জীবনে ছোটখাটো অশান্তি থাকবে না - এটা তো হতেই পারে না। তবে কিছু কার্যকর নিয়ম ও কৌশল অবলম্বন করলে এই সমস্ত পারিবারিক ছোটখাটো অশান্তি থেকে মুক্ত থাকা যায়। আজকে আমি পাঠক মহোদ্বয়ের উদ্দেশ্যে পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কৌশল সমুহ আলোচনা করব। যাতে সুখী ও সমৃদ্ধ পরিবার গড়ে তোলা যায়।
পোস্ট সুচী পত্রঃ পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কৌশল
- পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কৌশল
- পরিবারের মধ্যে ভাল যোগাযোগের মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখার উপায়
- পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্মান দিয়ে শান্তি বজায় রাখার উপায়
- রাগ নিয়ন্ত্রণ করে পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার পদ্ধতি
- আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে পরিবারের শান্তি বজায় রাখার উপায়
- পরিবারের ছোটদের লালন পালন পদ্ধতির মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখার নিয়ম
- মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রেখে পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কৌশল
- ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ মেনে পরিবারের শান্তি বজায় রাখার উপায়
- একসাথে সময় কাটিয়ে পরিবারের শান্তি ও বন্ধন বজায় রাখার নিয়ম
- ক্ষমা ও সহনশীলতা চর্চা করে পরিবারের শান্তি বজায় রাখার কৌশল
- যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে পরিবারের শান্তি বজায় রাখার উপায়
- উৎসব ও আনন্দঘন মুহূর্ত ভাগাভাগি করে পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার উপায়
- মন্তব্যঃ পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কৌশল
পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কৌশল
সবাই আশা করে যে তার পরিবার সুখী ও শান্তিপূর্ণ থাকুক। কিন্তু বর্তমান
ব্যস্ত জীবনে পারিবারিক বন্ধন বজায় রাখা এবং পরিবারের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি
রক্ষা করা অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে। পরিবার শুধু রক্তের সম্পর্ক নয়,
বরং ইহা একে অপরের সুখ--দুঃখের অংশীদারিত্বের জায়গা। শান্তিপূর্ণ পরিবার
গঠনের প্রথম ধাপ হল পারস্পরিক বোঝাপড়া। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মতামত ও
অনুভূতিকে মূল্যায়ন করতে হবে। কোন সদস্য ভুল করলে দোষারোপ না করে সমস্যা
সমাধানের দিকে মনোযোগ দিতে হবে, সময় মত একসাথে খাওয়া, ছোটখাটো আনন্দ উদযাপন এবং
নিয়মিত পারিবারিক সময় কাটানো সম্পর্কের বন্ধনকে অত্যন্ত দৃঢ় করে। এতে করে
পরিবারের মধ্যে আস্থা তৈরি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে পারিবারিক শান্তি
বজায় রাখে। এই নিয়মগুলো মেনে চললে পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায়
রাখার ভিত্তি গড়ে উঠবে।
পরিবারের মধ্যে ভাল যোগাযোগের মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখার উপায়
পরিবারের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখতে হলে ভালো যোগাযোগ অতীব প্রয়োজন।
এই ভালো যোগাযোগ শুধু পরিবারের ক্ষেত্রেই শুধু নয়, প্রতিটি ক্ষেত্রেই
যোগাযোগের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রবাদ একটি কথা প্রচলিত
আছে যে, চোখের আড়াল হলেই মনের আড়াল হয়। উক্ত প্রবাদ বাক্যের মাধ্যমে এই
যোগাযোগের বিষয়টি সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়েছে। যখন পরিবারের সদস্যরা খোলামেলা ও
আন্তরিকভাবে কথা বলেন, তখন ভুল বোঝাবুঝি কমে এবং সম্পর্ক আরো দৃঢ়
হয়। প্রতিটি পরিবারে কোনো না কোনো সমস্যা থাকবে। এজন্য প্রতিদিনই
নির্দিষ্ট একটা সময় পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে পরামর্শ করা।
প্রত্যেকদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পরামর্শ করা আমাদের
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ। মোটকথা এটা
আমাদের মুসলমানদের জন্য সুন্নাত। আজ এই সুন্নত আমল আমাদের সমাজ থেকে হারিয়ে
গেছে। আসুন আমরা এই পরিবারের সদস্যদের সাথে পরামর্শ করার আমলটি আরম্ভ করে দেই।
অনেক সময় আমরা নিজেদের সমস্যাগুলো প্রকাশ করি না, ফলে মনোমালিন্য
সৃষ্টি হয়। কিন্তু খোলাখুলি ভাবে কথা বললে সমস্যা দ্রুত সমাধান হয় এবং পরিবারের
মধ্যে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হয়। ভালো যোগাযোগ বলতে শুধু কথার মধ্যেই
সীমাবদ্ধতা নয়, প্রতিটি সদস্যের মতামত মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং বোঝার নাম।
অতএব আসুন পরিবারের সকল সদস্যদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখি এবং একে-অপরের
অনুভূতিগুলো শেয়ার করি এবং পরিবারের মধ্যে শান্তি বজায় রাখি।
পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক সম্মান দিয়ে শান্তি বজায় রাখার উপায়
আজ আমাদের সমাজে অধিকাংশ পরিবারের মধ্যে একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান বোধ
নেই বললেই চলে। পরিবারের প্রধান ব্যক্তি, তিনি অনেক সময় পরিবারের বিশেষ
কিছু সদস্যদের মতামতকে মূল্যায়ন করেন। পরিবারের আরো অন্যান্য সদস্যদের
মতামতকে মূল্যায়ন বা সম্মান দেখানো হয় না,এর ফলশ্রুতিতে পরিবারের মধ্যে একটি অদৃশ্য অন্তদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। যে
পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান থাকবে, সেখানে শান্তি ও বেশি দিন টিকে
থাকে। সম্মান মানেই শুধু বড়দের প্রাপ্য এটা ঠিক নয়। বরং ছোটদের প্রতিও
সমান আচরণ করা।
আরো পড়ুনঃ
এ ব্যাপারে একটি সুপ্রসিদ্ধ হাদিস বর্ণিত আছে। উক্ত হাদিসের সারাংশ কথা
হলেই-যে বড়দের সম্মান করে না, ছোটদের স্নেহ করে না এবং বিজ্ঞ ওলামায়ে
কেরামকে সম্মান দেখায় না, সে ব্যক্তি রাসূলের (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
অনুসারী হতে পারে না। যখন পরিবারের সবাই একে অপরকে সম্মান দেখাবে, তখন কোন বিষয়
নিয়ে মতবিরোধ হলেও সেটা তিক্ততায় রূপ নেয় না। পারস্পরিক সম্মান মানসিক
নিরাপত্তা তৈরি করে এবং সম্পর্ককে আরো গভীর করে তোলে। ছোটদের ভুলগুলো
গালমন্দ না করে তাদের ধৈর্যের সাথে বোঝাতে হবে। এজন্য পরিবারের কর্তা
ব্যক্তিকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে চলতে হবে। যখনই কোন পক্ষপাতিত্ব করবে
তখনই পরিবারের শান্তি নষ্ট হতে বাধ্য। অতএব একে অপরের মর্যাদা রক্ষা করা এবং
নিজেদের আচরণে ভদ্রতা বজায় রাখা পরিবারের শান্তি ধরে রাখার মূল চাবিকাঠি।
রাগ নিয়ন্ত্রণ করে পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার পদ্ধতি
আমরা একটি প্রবাদ সবাই জানি- সেটা হল “আপনি রেগে গেলেন তো হেরে
গেলেন”। আর এই কথাটি হাদিসের পরিভাষায় যেটা আছে সেটা হল- ওই ব্যক্তি
প্রকৃত বীর যে তার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে পারে।আজ অধিকাংশ পরিবার নিয়ন্ত্রণহীন
রাগের কারণেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। খবরের কাগজের মধ্যে এর প্রতিবেদন প্রায়ই
চোখে পড়ে। পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কৌশল হিসেবে রাগ
নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। অনেক সময় ছোটখাটো বিষয় নিয়ে রেগে গিয়ে আমরা
এমন কথা বলে ফেলি, যা সম্পর্ককে আঘাত করে। একটা বিষয় প্রত্যেকেই মনে রাখা
উচিত যে-প্রতিটি ব্যক্তির একটা নিজস্ব মূল্যবোধ আছে। সেখানে আঘাত না
করা। আমরা অনেক সময় বড়রা ছোটদেরকে ছোট মনে করে তার মূল্যবোধ বা সম্মানের
প্রতি খেয়াল না রেখে রাগের বশে অনেক কথাই বলে ফেলি। এটা অত্যন্ত
ক্ষতিকর।
আমার জানামতে রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রথম সূত্রই হল চুপ হয়ে যাওয়া। এবং স্থান
পরিবর্তন করা।অর্থাৎ যদি দাঁড়ানো থাকেন তাহলে বসে যান।প্রয়োজনে মুখমন্ডলে
পানি নিক্ষেপ করুন। যদি বসা অবস্থায় থাকেন তাহলে শুয়ে পড়ুন। এগুলো
রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য রসূলুল্লাহর নির্দেশিত সুন্নাহ। একটি কথা মনে রাখতে হবে
যে, রাগ সাময়িক হলেও এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়। পরিবারে কোনো সদস্যদের মতামত
আপনার পছন্দ না হলে রাগান্বিত না হয়ে চুপ থাকা এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ
করা। তারপর অন্য সময় ঠান্ডা মাথায় হেকমত পূর্ণ সমাধানমূলক আলোচনাটি
সদস্যের মধ্যে তুলে ধরা। ফলে তারা বুঝতে পারবে এবং আপনার সমাধানমূলক
আলোচনাটি মূল্যায়ন করবে। এর ফলশ্রুতিতে পরিবারের মধ্যে শান্তি বজায় থাকবে।
আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে পরিবারের শান্তি বজায় রাখার উপায়
আয় বুঝে ব্যয় করার অভ্যাস যে পরিবারে থাকবে না, সে পরিবারে কোনদিন
দীর্ঘস্থায়ী শান্তি আসবে না। এজন্য প্রতিটি পরিবারের উচিত সঠিক বাজেট তৈরি করা
এবং সে অনুযায়ী খরচ করা। অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে চলা এবং সঞ্চয় এর
অভ্যাস গড়ে তোলা। পরিবারের সকল সদস্যদের মধ্যে আয়-ব্যয়ের বিষয়ে স্বচ্ছতা
থাকা প্রয়োজন, যাতে কোন প্রকার ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়। বড় ধরনের কোন
কেনাকাটা বা বিনিয়োগের আগে সবার মতামত নেওয়া ভালো। যদি কোন ঋণ থাকে তাহলে
তা পরিষদের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। একটি পরিবারের ঋণ থাকা মানেই অশান্তির একটি
দরজা খুলে রাখা। অতএব ঋণ থাকলেই স্বল্প আয়ের মধ্য থেকেই ঋণ পরিশোধের
ব্যবস্থা করা। আর্থিক স্থিতিশীলতা মানে শুধু আয় বাড়ানোকে বুঝায়
না, বরং সঠিকভাবে অর্থের ব্যবস্থাপনা করাকে বুঝায়।
পরিবারের ছোটদের লালন পালন পদ্ধতির মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখার নিয়ম
পরিবারের কর্তা ব্যক্তির প্রধান দায়িত্ব হল ছোটদের লালন পালন সঠিকভাবে
করা। এ প্রসঙ্গে আমি একটি প্রবাদ বাক্য উল্লেখ করছি সেটা হলো ” কাঁচায় না
নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস” অর্থাৎ এখানে সরল কথা হলো এই
যে, বাশকে কাঁচা অবস্থায় বাকানো না গেলে পাকানো অবস্থায় বাকাতে
গেলে ঠাস ঠাস শব্দ হয়ে ফেটে যাবে। এ কথাটি বোঝানো হচ্ছে। উক্ত প্রবাদ
বাক্যের সারকথা হলো এই যে, কাঁচা অবস্থায় যেকোন জিনিস সঠিকভাবে গড়ে তোলা
যায়। যদি কাঁচা অবস্থায় সঠিকভাবে গড়ে তোলা না যায়। পরবর্তীতে
সেটাকে গড়তে গেলে ওই বাঁশের মতই ঠাস ঠাস শব্দ হয়ে ভেঙে যাবে। শিশুদের
ভালবাসা, যত্ন ও সঠিক শিক্ষা দেওয়া তাদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করে এবং
পারিবারিক পরিবেশকে সুন্দর রাখে। শিশুদের শাসনের সময় রাগের বদলে ধৈর্যের সাথে
ভালোবাসার শাসন দিয়ে তাদের বোঝানো উচিত, যাতে তারা ভুল বুঝতে পারে এবং
সংশোধন হয়।
ভালোবাসার শাসন সম্পর্কে আমার স্কুল জীবনের একটি লেখনি মনে পড়ে
গেল। যে লেখনীটি আমাদের স্কুলের প্রধান ফটকের মাথার উপরে সাইনবোর্ড আকারে
লেখা ছিল। সেখানে লেখা ছিল “শাসন করা তারই সাজে, সোহাগ যেজন যে
করে” অর্থাৎ যে সোহাগ করতে পারে না, সে শাসনও করতে পারে না। কেননা
সোহাগ ও শাসন একত্রে না থাকলে ওই শাসনের দ্বারা কেউ সংশোধন হয় না।
এ প্রসঙ্গে আমার উক্ত স্কুলের হেডমাস্টারের একটি ঘটনা উল্লেখ করছি। তিনি কোন
এক ছাত্রের অপরাধের কারণে তাকে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে এসে তাকে বেত দিয়ে কয়েক
ঘাঁ বেত্রাঘাত করলেন। তারপর উক্ত ছাত্রকে শ্রেণীকক্ষে পাঠিয়ে দিলেন। এবং
উক্ত ছাত্রকে শ্রেণীকক্ষে পাঠিয়ে দিয়ে নিজের চেয়ারে বসে অঝোরে
কাঁদলেন। আবার অনেকক্ষণ পরে উক্ত ছাত্রকে আবার তার অফিস কক্ষে ডেকে
পাঠালেন। এবার হেডমাস্টার মহোদয় সেই ছাত্রকে জড়িয়ে ধরে আবার
অনেকক্ষণ কাঁদলেন। এরপর অফিসের পিয়নকে দিয়ে মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি
কিনে এনে উক্ত ছাত্রকে কাছে বসিয়ে হেড স্যার মুখে তুলে
খাওয়ালেন। এবার ঘটলো মজার ঘটনা, সেটা হল-এবার উক্ত হেড স্যার এবং
ছাত্র দুজনেই অঝর নয়নে একসাথে কাঁদলেন। ঘটনাটি ১৯৮৮ সালের । তথন আমি নবম শ্রেণীর
ছাত্র। উপরোক্ত যে ঘটনাটি আলোচনা করলাম এটা কোন বানানো ঘটনা নয়। এটা আমি
স্বচক্ষে দেখেছি। সেটি আজ তুলে ধরলাম পাঠক মহোদয়ের উদ্দেশ্যে। এখন
আমরা বুঝে নেই, ছোটদের লালন পালন পদ্ধতির ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ অবলম্বন করব।
আরো পড়ুনঃ
মানসিক চাপ কমানোর কৌশল
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রেখে পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কৌশল
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার কৌশলগুলো জানতে হবে। শান্তিপূর্ণ পারিবারিক
জীবনের জন্য শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও সাম্যক
জ্ঞান থাকা জরুরী। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে
পরিবারের কর্তা ব্যক্তিকে সচেতন হতে হবে। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য শারীরিক
ফিটনেসের প্রতিও খেয়াল রাখতে হবে। প্রবাদে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, শরীর
ঠিক তো মনও ঠিক। আর মন ঠিক থাকলে সবকিছুই ঠিক থাকবে। অর্থাৎ শারীরিক
ফিটনেস এবং মানসিক ফিটনেস এর সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। তাই নিয়মিত
ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং রিলাক্সেশন টেকনিক প্রয়োগ করা
মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়ক হয়। পরিবারের সদস্যদের নিজেদের অনুভূতি
প্রকাশ করতে উৎসাহিত করা উচিত। এতে করে মানসিক চাপ কমে যাবে। একে অপরের
সমস্যা শোনার মানসিকতা রাখলে অনেক ঝামেলা আগেই সমাধান হয়ে যায়। মাঝে মাঝে
পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করা। এতে মানসিক
স্বাস্থ্য ভালো থাকে। অতএব পরিবারের শান্তি বজায় রাখতে হলে মানসিক
স্বাস্থ্যের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে।
ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ মেনে পরিবারের শান্তি বজায় রাখার উপায়
একটি পরিবারের শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ধর্মীয় চেতনা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ
গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। আজ আমাদের পরিবার থেকে ধর্মীয় চেতনা
দিন দিন লোপ পাচ্ছে। পরিবারের প্রতিটি সদস্য যদি পরিপূর্ণ ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে
চলে তাহলে উক্ত পরিবারের শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়। এটা ১০০ ভাগ
পরীক্ষিত। এজন্য পরিবারের কর্তা ব্যক্তিকে প্রথমে নিজেকেই ধর্মীয় চেতনার
উপর উদ্বুদ্ধ হতে হবে। তারপর পরিবারের অন্যান্য সকল সদস্যের প্রতি মেহনত
করতে হবে। পরিবারের সকল সদস্য যদি নামাজ, প্রার্থনা বা অন্যান্য ধর্মীয়
আচার অনুষ্ঠান একসাথে অংশগ্রহণ করলে পারিবারিক বন্ধন মজবুত হয়। ধর্মীয়
চেতনা ও নৈতিক মূল্যবোধ শুধু শান্তি রক্ষা করে না, বরং জীবনের সংকট এলে সঠিক
সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। অতএব বলা যায় যে পরিবারের শান্তি বজায় রাখার
ক্ষেত্রে ধর্মীয় চেতনা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
একসাথে সময় কাটিয়ে পরিবারের শান্তি ও বন্ধন বজায় রাখার নিয়ম
কর্মব্যস্ত জীবনে পরিবারের সাথে সময় কাটানোর জন্য আলাদা সময় বের করা শান্তি বজায়
রাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপায়। প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় একসাথে খাওয়া,
গল্প করা বা কোন বিনোদনমূলক কাজ করলে পারিবারিক সম্পর্ক আরো মধুর হয়।
সপ্তাহান্তে পরিবার নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়া বা একসাথে কোনো অনুষ্ঠান দেখা
আনন্দের মুহুর্ত তৈরি করে। কর্মব্যস্তার মাঝে অবসরে সময় পরিবারের সাথে কাটানো
সুন্নাহ। আজ আমাদের সমাজে এই সুন্নাহ আমলটি আর দেখা যায় না। আজ আমাদের সমাজে দেখা
যায় অবসর পাইলে চায়ের দোকানে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে সময় কাটায়। এটা ঠিক নয়।
পরিবারের সাথে সময় কাটানো মানে শুধু আনন্দ নয়; বরং একে অপরের প্রতি যত্নশীলতা
প্রকাশের সুযোগ পায়। অতএব মনে রাখতে হবে যে, পরিবারের শান্তি ও বন্ধন
বজায় রাখতে হলে পরিবারের সাথে অবসর সময় গুলো কাটানো।
ক্ষমা ও সহনশীলতার মাধ্যমে পরিবারের শান্তি বজায় রাখার কৌশল
মানুষ মাত্রই ভুল করবে। এটি মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সেই
ভুলগুলো ক্ষমা করতে পারলেই পারিবারিক বন্ধন ও সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। পরিবারে
কোনো সদস্য যদি ভুল করে, তার উপর দীর্ঘ সময় রাগ পুষে রাখা উচিত নয়। বরং
ভুলগুলো পরামর্শ মোতাবেক সংশোধন করা। প্রকৃত বন্ধু সেই ব্যক্তি
যে ভুলগুলো সংশোধন করে দেয়। আর আমাদের সমাজে যে ভুল ধরিয়ে দেয় তাকে
আমরা শত্রু মনে করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভুল ধরিয়ে দেওয়া ব্যক্তি
বন্ধু। সহনশীলতা চর্চা করলে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া বা মনোমালিন্য
অনেকটাই দূর করা সম্ভব হয়। সহনশীলতা মানে শুধু সহ্য করা তা নয়, বরং
অন্যের অবস্থা এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি
করা। অতএ ব পরিবারের দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখতে ক্ষমা ও সহনশীলতা
অপরিহার্য।
আরো পড়ুনঃ
যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে পরিবারের শান্তি বজায় রাখার উপায়
অনেক সময় আমাদের পরিবারের মধ্যে দেখা যায়, পরিবারের কর্তা ব্যক্তি সকল
সিদ্ধান্ত একতরফাভাবে গ্রহণ করে থাকে। এটা সঠিক নয়। পরিবারের কোন
সমস্যা উপস্থিত হলে সকল সদস্যদের সাথে পরামর্শ মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করা। এর ফলশ্রুতিতে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আন্তরিকতা ও মহাব্বত পয়দা
হয়। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম) তিনিও কোন কঠিন সমস্যা সম্মুখীন হলে পরিবারের সদস্য এবং সাহাবী
(রাঃ) দের সাথে পরামর্শ করতেন। যখন কঠিন বিষয়ে উপস্থিত হলে পরিবারের
সদস্যদের পরামর্শ গ্রহণ করলে তখন পরিবারের প্রতিটি সদস্য নিজেদেরকে মূল্যবান মনে
করে। এবং তারা সঠিক মতামত দেওয়ার জন্য নিজেরা মনে মনে গবেষণা করে। এজন্য যৌথ
সিদ্ধান্ত নেওয়া ভুলের সম্ভাবনা কমায় এবং সকলের দায়িত্ববোধ
বাড়ায়। সবাইকে মতামত দেওয়ার সুযোগ দিলে একে অপরের মধ্যে সম্পর্ক এবং
মহব্বতের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর ফলশ্রুতিতে দেখা যায় যে এভাবে যৌথ
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে পারিবারিক ঐক্য ও শান্তি দুই-ই বজায় থাকে।
উৎসব ও আনন্দঘন মুহূর্ত ভাগাভাগি করে পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার উপায়
পারিবারিক কিছু আনন্দঘন মুহূর্ত আছে যেমন- জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী বা
অন্যান্য আনন্দঘন মুহূর্ত পরিবারের সাথে উদযাপন করলে সবার মধ্যে আন্তরিকতা সৃষ্টি
হয়। পূর্বে দেখা গেছে শীতকাল এলেই পরিবারের মধ্যে সকল আত্মীয়-স্বজন দাওয়াত
দিয়ে নিয়ে এসে পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে যেত। মোটকথা পরিবারের মধ্যে এক পিঠা
উৎসব উদযাপিত হতো। এই পিঠা উৎসব এখন আর পরিবারে হয় না। এই পিঠা উৎসব
এখন উদযাপিত হয় বিভিন্ন সেমিনারে। পারিবারিক এইসব উদযাপন ও আনন্দঘন
মুহূর্তগুলো শুধু আনন্দই দেয় না; বরং পরিবারের ভেতরে ভালোবাসা ও একে অপরের
প্রতি কৃতজ্ঞতার অনুভূতি ও জায়গায়। উৎসবের সময় পুরনো মনোমালিন্য ভুলে গিয়ে
নতুনভাবে সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। পরিবারের দীর্ঘস্থায়ী শান্তি
বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই সমস্ত উৎসবগুলোর কোন বিকল্প নাই।
মন্তব্যঃপরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায় রাখার কৌশল
পরিবার হলো আমাদের জীবনের প্রথম বিদ্যালয়, যেখানে আমরা ভালবাসা, সহানুভূতি ও
সম্মানের শিক্ষা পাই। পরিবারের শান্তি বজায় রাখতে ছোটখাট বিষয়েকে বড় মনে
না করে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করা উচিত। পরিবারে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি বজায়
রাখা একদিনের কাজ নয়, বরং একটি অবিরত প্রক্রিয়া। ভালো
যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্মান, সহনশীলতা এবং ভালোবাসা--সবই মিলে একটি সুখী
পরিবার গড়ে ওঠে।পরিবারে প্রতিটি সদস্যের দায়িত্ব হলো অন্যের সুখের জন্য
চেষ্টা করা এবং সমস্যা হলে মিলেমিশে সমাধান করা। মনে রাখতে হবে
যে, শান্তিপূর্ণ পরিবারের জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ।
নাহার অর্গানিকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url