বাজার থেকে অর্গানিক খাবার চেনা ও কেনার কৌশল সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে,
যদি সুস্থ থাকতে চান। শাকসবজি, ফল, চাল-ডাল, দুধ. মাংস সহ ভেজাল মুক্ত
অর্গানিক খাবার চেনা ও কেনার কৌশল ও সংরক্ষণ টিপস এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো।
.webp)
বর্তমান আধুনিক যুগে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের কাছে অর্গানিক খাবারের চাহিদা দিন
দিন বেড়েই চলেছে। তাই অর্গানিক ও সাধারণ খাবারের মধ্যে পার্থক্য
বুঝতে না পারলেই ভেজাল খাবার চলে আসতে পারে। এজন্য অর্গানিক খাবার চেনা ও কেনার
কৌশল সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
পোস্ট সুচী পত্রঃ অর্গানিক খাবার চেনা ও কেনার কৌশল
অর্গানিক খাবার চেনা ও কেনার কৌশল সম্পর্কে কেন জানবেন
বাজার থেকে ভেজালমুক্ত অর্গানিক খাবার চেনা ও কেনার কৌশল গুলো জানা একজন
স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের অত্যন্ত জরুরী। কেননা এটি স্বাস্থ্য রক্ষায়
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
-
অর্গানিক খাবার চিনলে ভেজালের ফাঁদ পেরিয়ে সুস্থ থাকা সম্ভব হয়।
-
বাজারে অনেক বিক্রেতা ভেজালকে অর্গানিক বলে বিক্রি করে, সেজন্য চেনা দরকার।
-
কৌশল গুলো জানা থাকলে অর্থের অপচয়ও কম হয় এবং সঠিক খাবার ক্রয় করা সম্ভব
হয়।
-
ভেজালমুক্ত খাবার খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
-
পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য রক্ষায় এই জ্ঞান অপরিহার্য।
-
বাজারে দাম দেখে নয় গুন দেখে চেনা শেখা যায়।
-
অর্গানিক ফল-সবজি রং, আকার ও গন্ধ চিনলে ভেজাল ধরা সহজ হয়।
-
কীটনাশক মুক্ত খাবার জানলে অ্যালার্জি বা পেটের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা
থাকে না।
-
এই কৌশল পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করে, কারণ অর্গানিক চাষ টেকসই।
-
ভেজাল খাবারে হরমোন থাকে, যা শিশুদের বিকাশে ক্ষতি করে।
-
অর্গানিক দুধ বা মাংস চিনলে প্রোটিনের সঠিক উৎস পাওয়া যায়।
-
দীর্ঘ মিয়াদি স্বাস্থ্য বেনিফিটের জন্য অত্যাবশ্যক।
-
ভেজাল খাবারে বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে, যা ক্যান্সারের মতো রোগ ঘটাতে
পারে। এজন্য চিনতে হবে।
-
অবশেষে এই কৌশল জানলে জীবন মান উন্নত হয় এবং রোগের ঝুঁকিও কমে যায়।
বাজার থেকে অর্গানিক খাবার চেনার উপায়
অর্গানিক খাবার মানব স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও ভেজালমুক্ত অর্গানিক খাবার
বাজার থেকে ক্রয় করা অনেক কঠিন। এজন্য প্রতিটি ভোক্তাকে সচেতন হতে হবে
অর্গানিক খাবার ক্রয় করার ক্ষেত্রে। অর্গানিক খাবার গুলো চেনার কিছু
লক্ষণ আছে। এগুলো খেয়াল করতে হবে। অর্গানিক খাবার সাধারণত তাজা থাকে এবং এর
রং প্রাকৃতিক হয়। অনেক সময় কেমিক্যাল দেওয়া খাবার অস্বাভাবিক উজ্জ্বল
রঙের হয়, যা সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু আসল অর্গানিক খাবার থেকে প্রাকৃতিক
গন্ধ পাওয়া যায় এবং স্বাদও আলাদা হয়। তবে প্যাকেটজাত অর্গানিক খাবার
ক্রয়ের ক্ষেত্রে হবে লেভেল পরীক্ষা করে নিতে হবে। লেভেলের গায়ে লেখা
থাকবে ”অর্গানিক” বা ”কেমিক্যাল ফ্রি”।
আরো পড়ুনঃ
তবে লেভেল যুক্ত অর্গানিক খাবার বাজারের বিশ্বস্ত দোকান থেকে ক্রয় করা
নিরাপদ। অর্গানিক খাবার গুলো সাধারণত মৌসুম ভিত্তিক হয়ে থাকে। যদি
মৌসুমের বাহিরে উক্ত খাবার পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে খাবারটি অর্গানিক
নয়। বেশি পরিমাণে ক্রয়ের পূর্বেই স্বল্প পরিমাণ কিনে নিয়ে স্বাদ ও গন্ধ
যাচাই করে নেওয়া ভাল কৌশল। প্রকৃত অর্গানিক খাবার দ্রুত পতনশীল- এটাও একটি
চেনার কৌশল। আসল অর্গানিক সবজি বা ফল সাধারণত দেখতে সুন্দর কম
হয়। পক্ষান্তরে কেমিক্যাল দেওয়ার ফল ও সবজি সাধারণত দেখতে মসৃণ
হয়। এটাও একটি চেনার কৌশল। তাই প্রতিটি বিষয়ে খেয়াল করে ধৈর্য
সহকারে দেখে নিলে ভেজাল থেকে বাঁচা সম্ভব হবে।
ভেজাল মুক্ত অর্গানিক খাবার কেন গুরুত্বপূর্ণ
ভেজাল মুক্ত অর্গানিক খাবার মানুষের শরীরের সুস্থতার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখতে হয়। ভেজাল মানেই তো ক্ষতিকর। আজকাল বাজারে রাসায়নিক
ব্যবহার করা খাবার গুলো বেশি বিক্রয় হয়। যা দীর্ঘ মেয়াদে মানব শরীরের জন্য
ক্ষতিকর। পক্ষান্তরে অর্গানিক খাবার প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়, সেখানে কোন
কেমিক্যাল বা ক্ষতিকারক কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বিধায় এগুলো অর্গানিক হয়ে
থাকে। এই ধরনের ভেজাল মুক্ত অর্গানিক খাবার গুলো সুস্থতার পাশাপাশি শরীরের
রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।
আরো পড়ুনঃ
তবে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এই ধরনের খাবার বিশেষভাবে উপকারী। কেননা তাদের
দেহে ভেজাল খাবারের প্রভাবে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অর্গানিক খাবার প্রাকৃতিক
ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইভারে ভরপুর থাকে, যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরকে
সতেজ রাখে।
প্রকৃত অর্গানিক খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে দীর্ঘ মিয়াদী রোগ সমূহ যেমন যেমন
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়। ভেজাল
মুক্ত অর্গানিক খাবার খাওয়া মানে শুধু নিজের নয়; বরং পরিবার ও সমাজের জন্য একটি
নিরাপদ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রস্তুত করে। তালবাজার থেকে ভেজাল মুক্ত
অর্গানিক খাবার চেনা ও কেনার কৌশল জানা প্রত্যেকের জন্য জরুরি।
অর্গানিক খাবার ও সাধারণ খাবারের পার্থক্য জানার উপায়
অর্গানিক খাবার ও সাধারণ খাবার এর পার্থক্য বুঝতে হলে প্রথমেই জানতে হবে অর্গানিক
খাবার গুলো কি ধরনের এবং সাধারণ খাবার গুলো কি ধরনের হয়। তবে উভয়ের
মধ্যে বেশকিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সাধারণ খাবার উৎপাদনে রাসায়নিক সার,
কীটনাশক ও সংরক্ষণকরন ঔষধ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অর্গানিক খাবার উৎপাদনে
প্রাকৃতিক সার, প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি কীটনাশক ব্যবহার হয়ে থাকে। অর্গানিক
ফলমূল ও শাকসবজি সাধারণত আকারে ছোট হয়, দেখতে সুন্দর হয় না কিন্তু স্বাদও গন্ধে
প্রাকৃতিক হয়। পক্ষান্তরে সাধারন ফলমুল ও শাকসবজি আকারে বড় হয় ও দেখতে
সুন্দর হয়। অর্গানিক খাবার মৌসুম ভিত্তিক হয় এবং বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায়
না। কিন্তু সাধারণ খাবার দীর্ঘ সময় টিকে থাকলেও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত
ঝুকিপুর্ণ। সুতরাং বাজার থেকে অর্গানিক খাবার চেনার জন্য এই পার্থক্যগুলো জানা
একান্ত প্রয়োজন।
বাজারে তাজা অর্গানিক শাকসবজি চেনার কৌশল
অর্গানিক শাকসবজি চেনার কৌশলটা যথেষ্ট সহজ। রাসায়নিক শাকসবজি দীর্ঘ
সময় সতেজ থাকে কিন্তু অর্গানিক শাকসবজি দীর্ঘ সময় সতেজ রাখা সম্ভব হয় না।
জমি থেকে উত্তোলনের অল্প সময় পরপরই মলিন হয়ে যায়। অর্গানিক সবজি
রাসায়নিক সবজির তুলনায় দামে একটু বেশি হয়ে থাকে। কেননা অর্গানিক সবজি
উৎপাদনে প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করা হয়। অর্গানিক শাকসবজিতে প্রাকৃতিক গন্ধ
পাওয়া যায় কিন্তু যেখানে রাসায়নিক শাক-সবজিতে কৃত্রিম গন্ধ থাকার
সম্ভাবনা বেশি। অর্গানিক সবজি হাতে নিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে শক্ত
কম। কিন্তু রাসায়নিক ব্যবহার করা শাকসবজিতে অর্গানিকের তুলনায় একটু শক্ত
বেশি হয়। এটাও একটি চেনার কৌশল। অর্গানিক সবজি গুলো সাধারণত স্থানীয় চাষীদের
কাছে পাওয়া যায়। এভাবে আসল অর্গানিক শাকসবজি গুলো চেনা যাবে।
ফল কেনার সময় অর্গানিক ফল চেনার উপায়
অর্গানিক ফল সাধারণত প্রাকৃতিক আকারের হয়ে থাকে এবং বাইরের আবরণ অতিরিক্ত
চকচকে ভাব থাকে না। পক্ষান্তরে কেমিক্যাল দেওয়া ফল অস্বাভাবিক
উজ্জ্বল ও শক্ত হয়। রাসায়নিক মিশ্রিত ফল কেটে খেলে স্বাদ কৃত্রিম
মনে হয়। তবে বাজারের অর্গানিক ফল কেনার সময় মৌসুমী পাওয়া যায় এমন ফল
অগ্রাধিকার দিতে হবে। মৌসুমের বাইরে পাওয়া ফল অনেক সময় কেমিক্যাল ব্যবহার
করে সংরক্ষণ করে। কেননা কেমিক্যাল ব্যবহার না করলে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা
সম্ভব হয় না। কেননা অর্গানিক ফল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে
যায়। পক্ষান্তরে কেমিক্যাল ব্যবহার করা ফল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়
না। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। ফল হাতে নিয়ে চাপ দিলে যদি স্বাভাবিক
নরমত্ব বোঝা যায় তবে সেটি আসল অর্গানিক হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অতএব
বাজার হতে ফল কেনার সময় আলোচিত বিষয় গুলো খেয়াল করে ফল ক্রয় করতে
হবে। আশা করা যায় অর্গানিক ফল ক্রয় করা সহজ হবে।
অর্গানিক দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য চেনার নিয়ম
অর্গানিক দুধ সাধারণত ঘন ও প্রাকৃতিক গন্ধযুক্ত হয়। এতে
অস্বাভাবিকভাবে সাদা বা পানির মত পাতলা পাওয়া যায় না। পক্ষান্তরে
রাসায়নিক মিশ্রিত দুধে প্রাকৃতিক স্বাদ কম থাকে এবং সহজেই ফেনা হয় না।অর্গানিক
দুধ ফুটালে উপরে ঘন সাদা সর উঠবে, কিন্তু যেখানে ভেজাল দুধে এটি কম বা
পাতলা হয়।সাধারণত দীর্ঘ সময় ভালো থাকে না, তাড়াতাড়ি টক হয়ে
যায়। সেই লক্ষণ গুলো অর্গানিক হওয়ার লক্ষণ। কিন্তু কেমিক্যাল মিশ্রিত
দুধ দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায়। তবে স্থানীয় খামার থেকে দুধ
কিনলে অর্গানিক দুধ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। দুগ্ধজাত পণ্য যেমন
ঘি, দই, মাখন, পনির, ছানা ইত্যাদি। এগুলো অর্গানিক দুধ দিয়ে তৈরি হলে
প্রাকৃতিক স্বাদযুক্ত হবে। কিন্তু রাসায়নিক মিশ্রিত দুধ দিয়ে তৈরি
হলে প্রাকৃতিক স্বাদ পাওয়া যায় না। একটা আলাদা ধরনের স্বাদ পাওয়া যায়। তবে
বাজারে দুগ্ধজাত পণ্য কিনতে হলে সব সময় বিশ্বস্ত বিক্রেতাকে বেছে
নিতে হয়।
আরো পড়ুনঃ
বাজার থেকে ভেজালমুক্ত অর্গানিক চাল ও ডাল চেনার উপায়
অর্গানিক চাল সাধারণত প্রাকৃতিক রঙের হয় এবং অতিরিক্ত চকচকে ভাব থাকবে
না। পক্ষান্তরে রাসায়নিক মিশ্রিত চালে অস্বাভাবিক সাদা ও চকচকে
হয়। অর্গানিক চাল রান্না করলে ভাত নরম ও সুস্বাদু হয়, গন্ধ আলাদা
পাওয়া যায়। ডালের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য--অর্গানিক ডাল আকারে সমান না
হয়ে কিছুটা বৈচিত্র্যময় হয়। রাসায়নিক মিশ্রিত ডাল অস্বাভাবিক
উজ্জ্বল এবং দেখতে নিখুঁত হয়। যাহা অর্গানিক না হওয়ার প্রমাণ
করে। অর্গানিক ডাল রান্না করলে প্রাকৃতিক ঘ্রাণ ছড়ায়। যাহাতে
কেমিক্যাল মিশ্রিত ডালে পাওয়া যাবে না। প্যাকেটজাত চাল ও ডাল কেনার সময়
“অর্গানিক” লেবেল আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে স্থানীয় কৃষকদের
থেকে সরাসরি চাল বা ডাল কিনলে ভেজাল মুক্ত পণ্য পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
একটি কথা মনে রাখতে হবে যে. অর্গানিক যেকোনো পণ্য দেখে প্রথম অবস্থায়
পছন্দ হবে না। এটা একটা লক্ষণ। আর অর্গানিক নয় এমন পণ্য প্রথম
অবস্থায় দেখেই ভালো লেগে যাবে। এজন্য অর্গানিক পণ্য কেনার সময় খুবই সজাগ
থাকতে হবে।
প্যাকেটজাত খাবারের অর্গানিক লেভেল কীভাবে যাচাই করবেন
বর্তমান ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে খুব আকর্ষণীয় করে লেবেল লাগিয়ে পণ্য
বিক্রির প্রচারণা চালানো হয়ে থাকে। এই সকল আকর্ষণীয় লেবেল দেখে মুগ্ধ
হওয়া যাবে না। সব লেবেলই আসল হয় না। এজন্য যাচাই-বাছাই করা দরকার।
তবে অর্গানিক লেবেল যাচাই করার সময় প্রথমে সরকারি বা কোন সংস্থার স্বীকৃত
সার্টিটিফিকেশন আছে কিনা তা দেখতে হবে। পণ্যের মোড়কে “Certified
Organic” লেখা থাকলে সেটি আসল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাছাড়া
লেবেলের পিছনে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা ভালোভাবে দেখা উচিত।
লেবেল পড়ার সময় “No Preservatives” বা “Chemical Free” লেখা আছে কিনা দেখা
অত্যন্ত প্রয়োজন। আসল অর্গানিক লেবেল সবসময় স্পষ্টভাবে ছাপা থাকে
এবং সহজে মুছে যায় না। আসল অর্গানিক প্যাকেটজাত
লেভেলে উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ সঠিকভাবে এবং
স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকে। এগুলো খেয়াল করতে হবে। আবার অর্গানিক
প্যাকেটজাত পণ্য সামগ্রীর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। আশা করি
এগুলো অনুসরণ করলে আসল অর্গানিক প্যাকেট জাত পণ্য ক্রয় করা কিছুটা হলেও
সহজ হবে।
বাজার থেকে অর্গানিক মসলা কেনার টিপস
বাজার হতে অর্গানিক মসলা কেনার সময় বেশ কিছু টিপস খেয়াল রাখতে
হবে। তার মধ্যে অর্গানিক মসলা প্রাকৃতিক রঙের হয় এবং উজ্জ্বলতা সুন্দর
থাকে না। মোটকথা প্রথম অবস্থায় দেখে পছন্দ হবে না। পক্ষান্তরে
কেমিক্যাল মিশ্রিত মসলা দেখতে অনেক সুন্দর দেখাবে এবং দেখেই পছন্দ হয়ে
যাবে। এজন্য ক্রয় করার শুরুতেই অর্গানিক পণ্য চেনার কৌশল গুলো অনুসরণ
করতে হবে। তাই বাজার থেকে অর্গানিক মসলা কেনার সময় পরিচিত দোকান থেকে
কেনা সবচেয়ে নিরাপদ। অর্গানিক মসলা সাধারণ মসলার তুলনায় দাম বেশি
হবে। কেমিক্যাল মিশ্রিত মসলা দেখতে সুন্দর হবে এবং দামও কম
হবে। অপরদিকে অর্গানিক মসলা দেখতে সুন্দর হবে না এবং দাম বেশি
হবে। এখানে এসেই আমরা প্রতারিত হয়ে যাই। অর্গানিক মসলা যুক্ত রান্না
খাবার খেতেই মন চাইবে কিন্তু কেমিক্যাল মিশ্রিত মসলা দিয়ে রান্না
খাবার একটু খেলেই আর খেতে মন চাইবে না। অর্থাৎ রুচি নষ্ট হয়ে
যাবে। এগুলো অর্গানিক মসলা চেনার উপায়।
অর্গানিক মাংস ও ডিম কেনার কার্যকর কৌশল
অর্গানিক মাংস সাধারণত প্রাকৃতিক লালচে রঙের হয় এবং এতে অতিরিক্ত রক্তাক্ত ভাব
থাকে না। কেমিক্যাল দেওয়া মাংস অনেক সময় অস্বাভাবিক উজ্জ্বল ও শক্ত হয়।
অর্গানিক মাংসের গন্ধ স্বাভাবিক কিন্তু কেমিক্যাল মিশ্রিত
মাংসের দুর্গন্ধ থাকতে পারে। অর্গানিক ডিম এবং ভেজাল ডিম চেনার
সহজ কার্যকর কৌশল হল এই যে, অর্গানিক ডিম সাধারণত আকারে বৈচিত্র্যময় হয়
এবং খোসা শক্ত হয় কিন্তু ভেজাল ডিম একই মাপের হয় এবং উজ্জ্বল খোসাযুক্ত
হয়। মোটকথা ভেজাল ডিম দেখতে আকর্ষণীয় হয়, কিন্তু
অর্গানিক ডিম দেখতে আকর্ষণীয় হবে না। অর্গানিক ডিমে ভেতরের কুসুম গাঢ় হলুদ
থেকে কমলা রঙের হয়ে থাকে, কিন্তু সাধারণ ডিমে হালকা রঙের হয়। এটি একটি
অর্গানিক ডিম চেনার কৌশল। অর্গানিক মাংস ও ডিম পেতে হলে স্থানীয় খামার
থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
অর্গানিক তেল ও ঘি আসল-নকল চেনার উপায়
বর্তমানে বাজারে গিয়ে আসল তেল ও ঘি চেনা অত্যন্ত কষ্টকর ব্যাপার। এমন
ধরনের অত্যাধুনিক কেমিক্যাল বের হয়েছে যাহা ব্যবহার করে নকল তেল এবং নকল ঘি
উৎপাদিত হচ্ছে। অর্গানিক তেল সাধারণত প্রাকৃতিক রঙের হয় এবং এর ঘনত্ব
স্বাভাবিক থাকে। ভেজাল তেলে অস্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বা অতিরিক্ত পাতলা ভাব থাকতে
পারে। অর্গানিক তেল খেলে প্রাকৃতিক স্বাদ পাওয়া যায় এবং শরীরের ক্ষতিকর
প্রভাব পড়ে না। বাজারে তেল কিনতে হলে অবশ্যই লেবেল “অর্গানিক” উল্লেখ আছে
কিনা দেখা দরকার। অর্গানিক ঘি সাধারণত ঘন, প্রাকৃতিক গন্ধযুক্ত ও
হালকা হলুদাভাব হয়। আর নকল ঘি সাদা বা কৃত্রিম গন্ধ যুক্ত
হয়। অর্গানিক তেল ও ঘি সাধারনত দীর্ঘ সময় ধরে সংরক্ষণ করা যায় না। তাই
ক্রয় করে অল্প দিনেই ব্যবহার করতে হয়। বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড বা সরাসরি
উৎপাদকের কাছ থেকে তেল ও ঘি ক্রয় করা সবচেয়ে নিরাপদ।
অর্গানিক খাবার সংরক্ষণ ও ব্যবহার কৌশল
অর্গানিক খাবার সংরক্ষণ ও ব্যবহার কৌশল জানা অত্যন্ত জরুরি। কেননা
অর্গানিক খাবার সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি
থাকে। এই জন্য অর্গানিক খাবার গুলো সংরক্ষণ করার কিছু কৌশল আছে সেগুলো
যথাযথভাবে প্রয়োগ করা। যে সমস্ত অর্গানিক খাবার গুলো কাঁচা প্রকৃতির
যেমন শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মাংস ইত্যাদি। এগুলোর
সংরক্ষণ প্রক্রিয়া আলাদা ধরনের এগুলো ঠান্ডা স্থানে রাখলে অনেকদিন
সংরক্ষণ করা যায়।
আবার যে সমস্ত অর্গানিক খাবার গুলো শুকনো প্রকৃতির সেগুলোর সংরক্ষণ
প্রক্রিয়া ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন, চাল, ডাল বা মসলার মত শুকনো
অর্গানিক খাবার গুলো বায়ুরোধী কোটায় সংরক্ষণ করতে হয়। অর্গানিক দুধ বা
দুগ্ধজাত খাবার ফ্রিজে ছাড়া সংরক্ষণ করা যাবে না। এ সকল
দুগ্ধজাত খাবারগুলো ছোট ছোট কৌটায় করে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে
হয়। অর্গানিক খাবারে সংরক্ষণকারী রাসায়নিক না থাকার কারণে এগুলো সহজে
নষ্ট হয়ে যায়। তাই নিয়মিত নতুন করে বাজার করা সবচেয়ে ভালো কৌশল। সঠিক
ভাবে সংরক্ষণ করলে অর্গানিক খাবার থেকে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যায়।
স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ও অর্গানিক খাবারের উপকারিতা
অর্গানিক খাবার মানব শরীরের জন্য যেমন উপকারী তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার
ক্ষেত্রেও উপকারী। অর্গানিক খাবারে কেমিক্যাল অথবা ভেজাল উপাদান না থাকায়
মানব শরীরে দীর্ঘ মেয়াদী রোগের ঝুকি থেকে রক্ষা পায়। ফলে পরিবারের
অর্থনৈতিক খরচ বেঁচে যায়। অর্গানিক খাবার খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনি ভাবে একটি সুস্থ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হয়। এ
ছাড়া অর্গানিক উৎপাদন পদ্ধতি পরিবেশ-বান্ধব। এতে মাটি উর্বরতা বজায় থাকে
এবং পানি দূষণ কম হয়। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করায়
প্রাণীকুলের কোনো ক্ষতি হয় না। অতএব অর্গানিক খাবার শুধু স্বাস্থ্যকর নয়
বরং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অর্গানিক খাবার চেনা ও কেনার কৌশল- শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে অর্গানিক খাবারের প্রকৃত মূল্য শুধু স্বাস্থ্যের দিক থেকে
নয় ; বরং সমাজ ও পরিবেশের দিক থেকেও অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। আমরা
একটু সচেতন হলেই ভেজালমুক্ত খাবার খেতে পারি। আমরা যদি পরিবারের মধ্যে
ভেজালমুক্ত খাবারের ব্যবস্থা না করতে পারি তাহলে কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত সমাজ
গড়ে উঠবে না। এজন্য অর্গানিক খাবার চেনা ও কেনার কৌশল আয়ত্ত করা প্রতিটি
সচেতন নাগরিকদের দায়িত্ব। আমার বিশ্বাস, এই লেখার দ্বারা আপনাদেরকে
ভেজাল মুক্ত খাদ্য চেনা ও কেনার কৌশল সর্ম্পকে সজাগ করতে পেরেছি।
নাহার অর্গানিকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url