নিজের জড়তা কাটানোর গোপন ১৮টি কৌশল গুলো জানুন
নিজের জড়তা কাটানোর কৌশল গুলো না জানা থাকার কারণে আমাদের আত্মবিশ্বাস, সৃজনশীলতা এবং অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়।অনেক সময় মানুষ নিজের প্রতিভা থাকা সত্বেও এই জড়তার কারণে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন না। জড়তা এমন এক মানসিক বাধা যা আমাদের প্রতিভা, আত্মবিশ্বাস এবং সামগ্রিক সাফল্যের পথে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়ে যায়।
পোস্ট সূচিপত্র ঃ নিজের জড়তা কাটানোর ১৮টি কৌশল গুলো জানুন
- জড়তা কাটানোর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা
- আত্মপরিচয় ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা
- নেতিবাচক চিন্তা দূর করা
- দিনের কর্মপরিকল্পনাা করা
- পাঁচ মিনিটের নিয়ম পালন করা
- পরিবেশ পরিবর্তন করুন
- ছোট কাজে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো
- ভয়কে আলিঙ্গন করা
- প্রেরণাদায়ক গল্প পড়ৃন বা দেখুন
- সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন
- নিজের ব্যর্থতা মেনে নেওয়া
- নিজেকে সময় দিন
- শারীরিক ও মানসিক চর্চা
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান
- সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সচেতনতা
- একজন মেন্টর বা গাইড নির্বাচন করুন
- বিশ্রামের সময় গ্রহণ করুন
- সামাজিক দক্ষতা উন্নয়ন
জড়তা কাটানোর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা
নিজের জড়তা কাটানোর জন্য প্রথম ধাপ হলো ছোট ছোট অর্জন যোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা। বড় লক্ষ্য প্রায়ই ভীতিকর মনে হয়, যা আমাদের শুরু করতে বাধা দেয়। কিন্তু ছোট লক্ষ্য গুলো নির্ধারণ করলে মনের উপর চাপ কমে এবং কাজ শুরু করা অত্যন্ত সহজ হয়। ধরুন- আপনি কম্পিউটারে বাংলা টাইপ শিখতে চান। কিন্তু ইংরেজি টাইপ যত সহজ কিন্তু বাংলা টাইপ করা ততটা সহজ নয়। এখন তাই বলে আপনি কি বাংলা টাইপ শিখবেন না? অবশ্যই শিখবেন। এজন্য আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তাহা হইলো প্রতিদিন কিছুটা সময় আপনাকে কম্পিউটারে বসে কিবোর্ড নিয়ে টাইপ প্র্যাকটিস করা।
আরো পড়ুনঃ
আপনি টার্গেট করুন যে, প্রতিদিন ১০ টি শব্দ টাইপ করুন। এভাবে কিছুদিন
১০ টি শব্দ টাইপ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এবং পরবর্তীতে ১০টির সঙ্গে আর
ও পাঁচটি শব্দ বাড়িয়ে দিন। অর্থাৎ প্রতিদিন আবার ১৫ টি
শব্দ টাইপ প্র্যাকটিস করুন। এভাবে পর্যায়ক্রমে বাড়িয়ে বাড়িয়ে
অভ্যাস গড়ে তুলুন। এভাবে কিছুদিন চললে এমন এক সময় আসবে আপনি বাংলা টাইপ
করায় পারদর্শী হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আপনাকে ছোট থেকেই শুরু করতে
হবে। এটি আপনাকে ধীরে ধীরে বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য
করবে। লক্ষ্য ছাড়া চলা মানেই সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে দিক নির্দেশনা বিহীন নৌকা চালানোর ন্যায়। অতএব নিজের জড়তা কাটানোর ক্ষেত্রে এই লক্ষ্য নির্ধারণ করা অতীব
জরুরি।
আত্মবিশ্বাস ও আত্মপরিচয় গড়ে তোলা
নিজের জরতা কাটানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো নিজেকে জানা। নিজেই যদি নিজেকে ভালো করে না জানি তাহলে আমার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য গুলো পূরণ করা সম্ভব হবে না। নিজেকে নিয়ে গবেষণা করা যে , আমার মধ্যে কি কি গুণাবলী আছে ? কি কি দোষ আছে ? এগুলো নিয়ে প্রতিদিন অন্তত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সম্পর্কে পর্যালোচনা করুন এবং নিজের আত্মবিশ্বাস ও আত্মপরিচয় নিয়ে নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। দোষ গুলো পর্যালোচনা করে কমপক্ষে প্রতিদিন একটি দোষ পরিহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আর গুণ গুলো পর্যবেক্ষণ করে সেগুলো আরো উন্নত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। নিজের সম্পর্কে ইতিবাচক বাক্য বলুন, যেমন- “আমি যোগ্য” ”আমি পারবো” ”সবাই যখন পারে অতএব আমিও পারবো”- এরকম ইতিবাচক বাক্য নিজেকে মনে মনে বলতে থাকবেন। অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে নিজের পূর্বের সংস্করণের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করুন। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য আপনার ছোট ছোট সাফল্যগুলো স্মরণ করুন।সবসময় মনে রাখুন আপনার চেয়ে বড় প্রতিযোগী আপনি নিজেই। অতএব বলা যায় যে, নিজের জড়তা কাটানোর জন্য আত্মবিশ্বাস ও আত্মপরিচয় গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।
নেতিবাচক চিন্তা দূর করা
নিজের জড়তা দূর করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর করে দেওয়া। আমিও তো মাথার ভিতরে চলতে থাক “আমি পারবো না” অথব “আমার দ্বারা হবে না” ---- এই ভয়গুলো আমাদের সাহস নষ্ট করে দেয়। চিন্তার এই ধারা বদলাতে চাই সচেতন চর্চা।ইতিবাচক মনোভাব জড়তা কাটাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বরং নিজেকে নিজেই বলু “আমার চেষ্টা করতেই হবে”, “আমি প্রতিদিন উন্নতি করছি”। তাহলে দেখবেন আপনার মনের জড়তা অনেকটাই কেটে গিয়ে প্রফুল্লতা বোধ করবেন।
আরো পড়ুনঃ
দিনের কর্মপরিকল্পনা করা
নিজের জড়তা দূর করার জন্য সারাদিনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা। প্রতিদিন সকালে বা আগের রাতে আপনি সারাদিনের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করবেন। এটি হতে পারে একটি সাধারণ তালিকা, যেখানে আপনি সারাদিনের কাজগুলো লিখবেন এবং সেই মোতাবেক আপনি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। পরিকল্পনা আপনাকে দিক নির্দেশনা দেবে এবং মনোযোগ ধরে রাখবে। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দিন এবং তাদের সময় নির্ধারণ করুন।
এই কৌশল গুলো আপনার সময়কে সংগঠিত করবে এবং জড়তা কমিয়ে দিবে। অতিরিক্ত কাজের তালিকা তৈরি করলে হতাশা বেড়ে যেতে পারে। আপনি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী একটা কর্ম তালিকা তৈরি করবেন। এবং সেই মোতাবেক কর্ম তালিকার গুরুত্ব অনুযায়ী বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিবেন। একটি পরিকল্পিত দিন আপনাকে উৎপাদনশীল এবং সক্রিয় রাখবে। এভাবে আপনি দিনের পরিকল্পনা গ্রহণ করলে দেখবেন এক সময় আপনার জড়তা গুলো কেটে গেছে এবং আপনি কর্মঠ হয়ে গেছেন।
পাঁচ মিনিটের নিয়ম পালন করা
পাঁচ মিনিটের নিয়ম জড়তা কাটানোর একটি দুর্দান্ত কৌশল। এই নিয়মে বলা হয়
যেকোনো কাজ শুরু করার জন্য প্রথমে মাত্র পাঁচ মিনিট সময়
দিন। ধরুন- আপনার কোরআন তেলাওয়াতে জড়তা আছে সেক্ষেত্রে আপনি নিজেকে
স্থির করে নিন প্রতিদিন পাঁচ মিনিট কোরআন তেলাওয়াত করব। এভাবে যদি অভ্যাস
করেন তাহলে দেখবেন এই কোরআন তেলাওয়াত আপনার জন্য সহজ হয়ে গেছে। এটা তো
শুধু আমি আপনাকে উদাহরণ হিসেবে লিখলাম। কিন্তু এটা প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই
এই পাঁচ মিনিটের সূত্রটি ব্যবহার করবেন। এই নিয়ম মনের উপর চাপ কমিয়ে কাজকে
সহজ করে দেয়। এই পাঁচ মিনিটের কৌশলটি যে কোন কাজের জন্য কার্যকর। যেমন
লেখাপড়া, লেখালেখি অথবা ঘর পরিষ্কার কিংবা অন্যান্য কাজ। 5 মিনিটের
নিয়ম আপনাকে গতিশীল করে তুলবে। এই পাঁচ মিনিটে নিয়ম জড়তার প্রাথমিক
প্রতিরোধ ভেঙে দেয়।
পরিবেশ পরিবর্তন করুন
জড়তা দূর করার জন্য পরিবেশ পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । একটি অগোছালো
বা বিশৃঙ্খল পরিবেশ মনকে অলস করে তুলতে পারে। কাজের জায়গা গুলো যত পরিষ্কার
এবং সুন্দর পরিচ্ছন্ন হবে মন তত ফ্রেশ হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা
যায়- ঘরের এমন একটি জায়গায় আপনার অধ্যয়ন করা টেবিলটি স্থাপন
করুন যাতে সামনে জানালা থাকে। জানালা দিয়ে প্রাকৃতিক আলো মনকে
সতেজ করতে পারে। আপনি নিজেই চিন্তা করুন ? একটা সুন্দর পরিবেশে গেলে
মনটি কেমন হয়। সেখানে কিছু সময় অবস্থান করতে মন চায়। পক্ষান্তরে
অগোছালো বিশৃঙ্খল পরিবেশে গেলে মনটি কেমন হবে ? একটিবার চিন্তা করুন অবশ্যই ভালো
লাগবে না। অতএব বলা যায় যে, পরিবেশের পরিবর্তন জড়তা কাটানোর ক্ষেত্রে
যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
আরো পড়ুনঃ
ছোট কাজে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো
আপনি হুট করে খুব আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারবেন না। বরং প্রতিদিন ছোট ছোট পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যান। প্রথমে পরিচিতদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলুন । পরবর্তীতে ধীরে ধীরে অপরিচিতদের সঙ্গে কথা বলে আন্তরিকতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন। এগুলো আপনার মস্তিষ্ক “সাফল্যের বার্তা” পাঠায়। যত বেশি কাজ করবেন, তত বেশি নিজের প্রতি বিশ্বাস বাড়বে।
ছোট সাফল্য আপনাকে বড় কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস দেবে। বড় কাজের চিন্তা করলে অনেকেই জড়তা অনুভব করে, তাই প্রথমে ছোট কাজ দিয়ে শুরু করা বুদ্ধিমানের পরিচয় বহন করে। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন সবাই প্রথমে ছোট ছোট কাজ দিয়েই শুরু করেছেন। পরবর্তীতে সাফল্যের উচ্চ শিখরে উঠেছেন। সুতরাং নিজের জড়তা কাটাতে যে কোন কাজ ছোট থেকেই শুরু করে দিন।
ভয়কে আলিঙ্গন করা
নিজের জড়তা দূর করতে হলে ভয় থেকে পালিয়ে নয়, বরং তাকে বুঝে ধীরে
ধীরে মোকাবেলা করাই হল সাহসিকতা। ভয় কাটাতে হলে প্রথমেই তাকে স্বীকার
করতে হবে। যে বিষয়ে ভয় পাবেন, সেটি ছোট ভাবে চর্চা
করুন। ধরুন- আপনি পাবলিক প্লেসে বক্তব্য দিতে গেলে ভয় এবং জড়তা
ঘিরে ধরবে। সে ক্ষেত্রে আপনি ছোট দিয়ে শুরু করুন। এই বক্তব্যই আপনি
প্রথমে দুই বন্ধুর সামনে বলে অভ্যাস করুন।তাহলে দেখবেন আপনার ভয় কেটে গেছে এবং
সমস্ত জড়তা দূর হয়ে গেছে। এই বিষয়টা আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে
লিখছি। ব্যর্থতার ভয়, প্রত্যাখ্যানের ভয় বা অজানা ভয় গুলো আমাদের
মধ্যে জড়তা সৃষ্টি করে দেয়। আপনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন, যে কাজটি করতে
যাচ্ছি সেটা “সবচেয়ে খারাপ কি হতে পারে?” তাহলে দেখবেন আপনার ভয় ছোট হয়ে
গেছে।
প্রেরণাদায়ক গল্প পড়ুন বা দেখুন
বিশ্বের অনেক সফল মানুষই একসময় ভয়, ব্যর্থতা ও জড়তার মধ্য দিয়ে
গেছেন। তাদের জীবনী পড়লে বোঝা যায় যে ব্যর্থতা কেবল শুরু শেষ
নয়। প্রবাদ একটি কথা আছে-- ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি। প্রতিদিন
একটি ইতিবাচক বই পড়ুন অথবা মোটিভেশনাল ভিডিও দেখুন। এটি আপনার মনকে উৎসাহিত
করবে এবং সকল জড়তা কমিয়ে দেবে। বিখ্যাত লেখক ডেল কার্নেগীর বই গুলো
পড়তে পারেন। আমি নিজেও এই ডেল কার্নেগীর বইগুলো অধ্যায়ন করেছি। সফল
মানুষের জীবনী পড়ুন। দেখবেন তাদের জীবন শুরুই হয়েছে জড়তা আর হতাশা
দিয়ে। পরবর্তীতে তারা সাফল্যের উচ্চ শিখরে পৌঁছে গেছেন। অতএব বলা যায়
যে, প্রেরণাদায়ক গল্প বা মটিভেশনাল ভিডিও আপনার জড়তা কাটানোর জন্য
একটি উল্লেখযোগ্য কৌশল। শুধু তাই নয় এটা একটি পরীক্ষিত কৌশল।
সময় নষ্ট করা বন্ধ করুন
নিজের জড়তা কাটানোর জন্য সময় ব্যবস্থাপনাকে মূল্যায়ণ করতে হবে। সময়ের অবমূল্যায়ন মানুষের জড়তার প্রধান কারণ। অর্থহীন কাজের সময় ব্যয় করলে উৎপাদনশীলতা কমে যায়। আজ মানুষ সবচেয়ে বেশি অপচয় করে সময়। ঘন্টার পর ঘন্টা ফেসবুকে মনোনিবেশ করা, টিভি দেখা, গেম খেলা ইত্যাদি। আপনার দিনের কাজগুলো বিশ্লেষণ করুন এবং দেখুন কোথায় সময় নষ্ট হচ্ছে। এই সময়টি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করুন। সময় নষ্ট না করলে মানুষের জড়তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যায়।প্রয়োজনে একটি কাজের লিস্ট তৈরি করুন। সময়কে ভাগ করে কাজ করুন। সময় মত কাজ করলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। অতএব নিজের জড়তা কাটানোর ব্যাপারে সময় নষ্ট না করা অত্যন্ত জরুরি।
নিজের ব্যর্থতা মেনে নেওয়া
ব্যর্থতা ও সফলতা নিয়েই মানুষের জীবন। জীবনে প্রত্যেকেই ব্যর্থ হয়। ব্যর্থতা মানেই আপনি যে অযোগ্য, সেটা নয়। বরং একটি শেখার এক অপূর্ব সুযোগ মাত্র। নিজের ভুলগুলো থেকে শেখার চেষ্টা করুন। ব্যর্থতাকে আপনার অভিজ্ঞতার অংশ বানিয়ে ফেলুন। সাফল্যের গল্প যতটা প্রেরণাদায়ক, ব্যর্থতার গল্পও ততটাই শেখায়। জড়তা কাটানোর জন্য প্রথমে নিজের ভুল গ্রহণ করতে হবে। যারা নিজেদের ব্যর্থতাকে মেনে নিতে পারে, তারা ভবিষ্যতে বড় সাফল্য লাভ করে। নিজের এই ব্যর্থতা মেনে নেওয়া জড়তা কাটানোর একটি সুন্দর কৌশল। অতএব নিজেকে প্রতিদিন বলুন-- আজ যেটা হয়নি, কাল ইনশাল্লাহ সেটা শিখে নেব। তাহলেই আপনার নিজের জড়তা কেটে সাফল্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন।
নিজেকে সময় দিন
জীবনের প্রতিযোগিতার মাঝে আমরা নিজেদেরকে সময় দিতে ভুলে যাই। আর এই
ব্যস্ততা আমাদের মনের ক্লান্তি বাড়িয়ে তোলে, যা জড়তার জন্ম
দেয়। প্রতিদিন অন্তত 30 মিনিট নিজের জন্য রাখুন। সেখানে আপনি বই পড়তে
পারেন, গান শুনতে পারেন অথবা নিরিবিলি একাধিক কোথাও হাঁটতে
পারেন। আপনার কি ভালো লাগে, কোন পরিস্থিতিতে আপনি অস্বস্তি বোধ
করেন-- এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করুন। নিজের যত্ন নেওয়া মানেই আত্মিক
শক্তি অর্জন। আপনি যত নিজের অবস্থার দিকে মনোযোগী হবেন ততটা আপনার জড়তা কমে
যাবে।
শারীরিক ও মানসিক চর্চা
শারীরিক জড়তা মানসিক জড়তার সাথে সম্পর্কিত। নিয়মিত শরীরচর্চা আপনার শরীর ও মনকে সক্রিয় রাখে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাটা, যোগব্যায়াম বা ব্যায়াম করুন। শরীর চর্চা মস্তিষ্কে আন্ডারফিন নিঃসরণ করে, যা মেজাজ উন্নত করে। এটি আপনার শক্তি বাড়ায় এবং জড়তা কমিয়ে দেয়। ব্যায়ামের সময় মজার কিছু করুন। যেমন গান শুনুন বা বন্ধুর সাথে হাটুঁন। শরীর চর্চা শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি জড়তা কাটানোর বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অস্ত্র।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
জড়তা কাটাতে শারীরিক স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার শরীর
ও মনকে শক্তিশালী রাখে।ফাস্টফুড বা অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার এড়িয়ে
চলুন। ফল, শাকসবজি এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।এটি আপনার শক্তি বাড়ায়
এবং মানসিক কুয়াশা কমায়।উদাহরণস্বরূপ, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ বা
বাদাম খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন, কারণ ডিহাইট্রেশন
জড়তা বাড়াতে পারে। স্বাস্থ্যকর খাবার আপনার মনকে সতেজ রাখবে। এটি
জড়তার বিরুদ্ধে একটি সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সচেতনতা
সোশ্যাল মিডিয়া জড়তার একটি বড় কারণ। অতিরিক্ত সময় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টিকটকে এ কাটালে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। এটি আপনার মনোযোগ ভঙ্গ করে এবং জড়তা বাড়ায়। প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সীমিত করুন। উদাহরণস্বরূপ- দিনে ৩০ মিনিটের বেশি ব্যবহার না করার নিয়ম করুন। ফোনের নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিন, যাতে মনোযোগ না ভাঙ্গে। এই সময়টি কাজ বা সৃজনশীল কিছু করতে ব্যবহার করুন। আজ সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের জীবনকে জড়তা শীর্ষে নিয়ে গেছে। অতএব এটির পরিমিত ব্যবহার জড়তা কাটানোর বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ।
একজন মেন্টর বা গাইড নির্বাচন করুন
নিজের জড়তা কাটানোর জন্য একজন মেন্টর বা গাইড নির্বাচন করা খুবই প্রয়োজনীয়। আপনার চারপাশের মানুষ আপনার মানসিকতার উপর প্রভাব ফেলে। এজন্য আপনি এমন এক ব্যক্তিকে বেছে নেন যাকে আপনি বিশ্বাস করেন যে, সে আমাকে উত্তম পরামর্শ দিবে, সঠিক পথের কথা বলে দিবে।এরকম ব্যক্তি বাছাই করা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকে যারা সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছেছেন তাদের একজন মেন্টর বা গাইড ছিল। যখন আপনি কোন বিষয়ে জটিলতা বোধ করবেন তখন উক্ত মেন্টর বা গাইড এর সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এতে আপনার জড়তা কেটে যাবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
বিশ্রামের সময় গ্রহণ করুন
জড়তা কখনো কখনো অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণে হয়। নিয়মিত বিশ্রাম আপনার শক্তি
পুনরুদ্ধার করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন, ৭-৮ ঘন্টা
আদর্শ। কাজের মাঝে ছোট বিরতি নিন। অতিরিক্ত কাজ করলে মন ও শরীর ক্লান্ত
হয়, যা জরতা বাড়ায়। বিশ্রাম আপনার মনকে সতেজ করে এবং নতুন উদ্যোম
যোগায়। বিশ্রামের সময় মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া এড়িয়ে চলুন। ইহা
আপনাকে পুনর্জীবিত করবে এবং জড়তাকে কমিয়ে দেবে।
সামাজিক দক্ষতা উন্নয়ন
জড়তার অনেকটাই আসে সামাজিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না পারার কারণে। অনেক সময় সামাজিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে না পেরে বিমর্ষ হয়ে যায়। এজন্য নিজের জড়তা কাটতে হলে সামাজিক পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করতে হবে। সবার সামনে কথা বলায় অস্বস্তি, অচেনা পরিবেশে নিজেকে গুটিয়ে রাখা এসবই জড়তার বিভিন্ন রূপ। সামাজিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন কারো সঙ্গে কথা বলার চর্চা করুন, প্রশ্ন করুন, মনোযোগ দিয়ে শুনুন, সঠিক সময়ে উত্তর দিন। এভাবে আপনি সামাজিক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবেন। নিজের জড়তা দুর করতে হলে সামাজিক দক্ষতা বাড়াতে হবে।
উপসংহার
জড়তা কাটানো কোন ম্যাজিক নয়। এটা একটি ধৈর্য পূর্ণ প্রক্রিয়া, যেখানে নিজেকে বুঝতে হয়, সাহস করতে হয় এবং সময় দিতে হয়। উপরের কৌশল গুলো প্রতিদিন চর্চা করলে ধীরে ধীরে আপনার ভিতরে পরিবর্তন আসবে। আপনি দেখতে পাবেন, যে কাজগুলো একসময় কঠিন মনে হতো, এখন তা সহজ লাগছে। সবচেয়ে বড় কথা, নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। জড়তা আসে এবং কেটে যায়। আপনার সাহসের জন্য অপেক্ষা করে।
লেখকের মন্তব্য
আমি নিজেও এক সময় ভয় ও সংকোচে ভুগতাম। আমি সবার কাছে অবহেলা এবং উপহাসের পাত্র ছিলাম। ধীরে ধীরে এই কৌশল গুলো প্রয়োগ করে আমি আমার জড়তা কাটাতে সক্ষম হয়েছি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, জড়তা কোন দুর্বলতা নয়, এটি একটি চ্যালেঞ্জ। আমার এই লেখাটি হয়তো আপনার জন্য সেই চ্যালেঞ্জ জয় করার দিক নির্দেশনা হতে পারে। তখন আমি নিজেকে ধন্য মনে করব।
নাহার অর্গানিকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url