বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনার সহজ উপায়
অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য
বলতে সেই সমস্ত খাদ্যকে বোঝায় যা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে, ক্ষতিকর রাসায়নিক
ছাড়াই উৎপাদন করা হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো - কিভাবে আমরা বুঝতে পারবো
কোনটা অর্গানিক এবং কোনটা ভেজাল ? অতএব আমার এই লেখনীতে থাকছে এমন ১৬টি
কার্যকর উপায়, যা অনুসরণ করলে আপনি নিজেই বাংলাদেশের অর্গানিক ফুড ও
খাদ্যশস্য খুব সহজেই চিনতে পারবেন।
পোস্ট সুচী পত্র ঃ বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনার সহজ উপায়
- বাংলাদেশ অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনার সহজ উপায়-প্যাকেজিং লেবেল পরীক্ষা কর
- স্বাদ ও ঘ্রাণ অস্বাভাবিকতা পরীক্ষা করা
- অর্গানিক ফুড বা খাদ্যশস্যের রঙ ও গঠন পর্যবেক্ষণ করা
- পোকার দাগ বা প্রাকৃতিক চিহ্ন যাচাই করা
- কেমিকেল ফ্রি সার্টিফিকেট সনদ যাচাই
- স্থানীয় অর্গানিক কৃষকদের সাথে যোগাযোগ
- স্থানীয় অর্গানিক বাজার ও মেলা অনুসন্ধান
- মাটির গন্ধ পরীক্ষা করা
- পানিতে ভাসিয়ে বা ভিজিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি
- শেল্ফ লাইফ পরীক্ষা করা
- রান্নার করে পরীক্ষা করা
- ফল বা সবজির ওজন পরীক্ষা
- স্বাভাবিক মেয়াদ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি
- অর্গানিক ফুড বা খাদ্যশস্যের দাম মুল্যায়ণ করা
- সোশ্যাল মিডিয়া বা ওয়েবসাইটের রিভিউ
- সরকারী বা আন্তজার্তিক অনুমোদন
- উপসংহার
- লেখকের মন্তব্য
১. বাংলাদেশ অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনার সহজ উপায়-প্যাকেজিং লেবেল পরীক্ষা করা
বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনার অন্যতম প্রধান উপায় হল পণ্যের গায়ের প্যাকেজিং লেবেল যাচাই করা। সত্যিকারের অর্গানিক পণ্য গুলোর মোড়কে সাধারণত ”১০০% ভাগ অর্গানিক বা সার্টিফাইড অর্গানিক” এর রকম জাতীয় সিল বা লোগো লাগানো থাকে। বাংলাদেশে এমন কিছু স্থানীয় অর্গানিক কোম্পানি আছে, যারা নিজেদের অর্গানিক সনদসহ লেভেল ব্যবহার করে থাকে। এসব লেবেল পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও কেমিক্যাল মুক্ত উৎপাদন নিশ্চিত করে। লেবেল ভালোভাবে খুটিয়ে দেখতে হবে, যেখানে কোন সংস্থার সার্টিফিকেট বা কোন তৃতীয় পক্ষের যাচাই রয়েছে কিনা তা দেখা জরুরী।
আরো পড়ুনঃ
অনেক সময় বাজারে ভেজাল পণ্য ভুয়া লেবেল দিয়ে বিক্রি হয়, তাই সরকারি অনুমোদিত বা খ্যাতনামা সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত সনদ বিশিষ্ট লেবেলকেই বিশ্বাস করতে হবে। লেবেলে উৎপাদন পদ্ধতির বিবরণ বিস্তারিত থাকলে সেটিও সহায়ক হতে পারে। তবে বাংলাদেশের BSTI পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অতএব লেবেলে BSTI অনুমোদিত সিলমোহর থাকলে গ্রহণ যোগ্য হতে পারে। কাজেই নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ড ও স্বীকৃতি লেবেল বিশিষ্ট পণ্য ক্রয় করা সবচেয়ে নিরাপদ। এইভাবে লেবেল যাচাই করে আমরা সহজেই বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য গুলো চিনতে পারি।
২. স্বাদ ও ঘ্রাণ অস্বাভাবিকতা পরীক্ষা করা
স্বাদ ও গন্ধ দ্বারা পরীক্ষা করা একটি কার্যকর পদ্ধতি। যদিও বাজারে কেনার সময় খাবারের স্বাধ নেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে । অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্যের স্বাদ ও ঘ্রাণ স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক হয়। কিন্তু রাসায়নিক যুক্ত খাবারে এই গন্ধ কম থাকে বা কৃত্রিম স্বাদ অনুভূত হয়। অনেক সময় বাজারের ফল বা চালের ঘ্রাণ অস্বাভাবিকভাবে বেশি হয়, যা কেমিক্যাল ব্যবহারের লক্ষণ প্রকাশ পায়। বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য গুলো চিনতে স্বাদ ও ঘ্রাণ সর্ম্পকে ভাল ধারনা থাকতে হবে। আপনি যদি এই ঘ্রাণ ও স্বাদ সম্পর্কে ধারণা না রাখেন তাহলে অর্গানিক ফার্ম বা উৎপাদন স্থলে গিয়ে এ সর্ম্পকে বিশদ ধারনা নিতে হবে। অতএব বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য সহজে চিনতে হলে স্বাদ ও গন্ধ বুঝতে পারা অত্যন্ত জরুরী।
৩. অর্গানিক ফুড বা খাদ্যশস্যের রঙ ও গঠন পর্যবেক্ষণ করা
অর্গানিক ফুড বা খাদ্যশস্য সহজে চেনার ক্ষেত্রে রঙ ও গঠন পর্যবেক্ষণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। কেননা অর্গানিক শস্যের রঙ সাধারণত প্রাকৃতিক এবং কিছুটা অসমান অর্থাৎ সুন্দর দেখায় না। পক্ষান্তরে রাসায়নিক শস্যে প্রক্রিয়াজাতকরণের কারণে রং উজ্জ্বল এবং সুন্দর দেখায়। শস্যের দানা হাতে নিয়ে রঙের প্রাকৃতিকতা পরীক্ষা করলে বোঝা যাবে। যদি সব দানা একই রঙের হয়, তবে তা রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাতকরণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অর্গানিক শস্যের গঠন সবসময় একরকম মনে হবে না। এটি প্রাকৃতিকভাবে চাষ করা হয় বলে কিছুটা ছোট, কিছুটা বড় হতে পারে। পক্ষান্তরে কৃত্রিম বা প্রক্রিয়াজাতকরণের খাদ্যশস্যের সবগুলো এক মাপ ও আকৃতির হয়, যা দেখতে অনেক সুন্দর এবং নিখুঁত পরিলক্ষিত হয়।
৪. পোকার দাগ বা প্রাকৃতিক চিহ্ন যাচাই করা
অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্যে পোকা বা কীট থাকতে পারে, কারণ এগুলো কীটনাশক ছাড়া উৎপন্ন হয়েছে। এটি বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনার একটি সহজ উপায়। অর্গানিক শস্যের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হলো পোকার উপস্থিতি। তবে, অতিরিক্ত পোকা থাকলে বুঝে নিতে হবে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয় নাই। যদি কয়েকটি প্রকার উপস্থিতি দেখা যায়, তবে তা অর্গানিক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পক্ষান্তরে রাসায়নিক শস্যে পোকা থাকার সম্ভাবনা খুবই কম, কেননা এতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। অর্গানিক ফল বা সবজিতে প্রায়ই পোকার দাগ বা ছোট ছোট দাগ থাকে. যা কীটনাশক ব্যবহার না করারই লক্ষণ বোঝা যায়।
এ প্রসঙ্গে আমার একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি যে, একটি স্থানীয় হাটে এক ভদ্রলোককে দেখলাম পোকা ওয়ালা বেগুন গুলো বেছে নিচ্ছেন। আমি তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করতেই তিনি জানালেন উনি একজন ডাক্তার। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটাল এ কর্মরত আছেন।আমি তার পরিচয় পেয়ে ”স্যার” সম্বোধন করে বললাম যে , এই পোকা ওয়ালা বেগুন বেছে নেওয়ার আড়ালের রহস্যটি জানাবেন কি ?
আরো পড়ুনঃ
তিনি উত্তরে বললেন যে, রাসায়নিক এবং কীটনাশক ব্যবহার কম করার কারণেই এই
বেগুন গুলোতে একটু পোকা আক্রান্ত হয়েছে। আমি এই পোকা খাওয়া অংশটুকু কেটে
ফেলে দিব এবং ভালো অংশটা রান্নার কাজে ব্যবহার করব। অতএব শ্রদ্ধয়ে
পাঠক বুঝে নিন যে, বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনার উপায় হিসেবে
এটা কতখানি গুরুত্ব বহন করে।
৫. কেমিকেল ফ্রি সার্টিফিকেট সনদ যাচাই
অনেক প্রতিষ্ঠান এখন অর্গানিক পণ্যের জন্য কেমিক্যাল ফ্রি বা নন টক্সিক সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে। যদি কোন পণ্য কেমিক্যালমুক্ত বলে দাবি করে তাহলে তাদের কাছ থেকে সেই প্রমাণ দেখতে চাওয়া উচিত। বাংলাদেশের কিছু স্থানীয় এনজিও ও বেসরকারি সংস্থা এই যাচাইয়ের কাজ করে থাকে।অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনার ক্ষেত্রে এই কেমিক্যাল ফ্রি সার্টিফিকেশন সনদ যাচাই একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক। বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে অর্গানিক পণ্যে USDA, EU বা JAS - এর মতো সার্টিফিকেশন থাকতে পারে। বাংলাদেশে কিছু স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন প্রাণ অর্গানিক বা শস্য প্রবর্তনা, তাদের পণ্য এই ধরনের সার্টিফিকেশন ব্যবহার করে। তবে, স্থানীয় বাজারে সব অর্গানিক পণ্যে সার্টিফিকেশন নাও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে।
৬. স্থানীয় অর্গানিক কৃষকদের সাথে যোগাযোগ
স্থানীয় কৃষকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে অর্গানিক শস্য কিনলে প্রতারণার
ঝুঁকি কম থাকে।কৃষকদের বাজারে গিয়ে তাদের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে
জানুন। অর্গানিক চাষে জৈব সার এবং প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করা
হয়। কৃষকদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা এবং সার ব্যবহারের বিবরণ জানতে চান।
স্থানীয় কৃষক সমবায়ের সাথে যোগাযোগ করুন। এতে বিশ্বাসযোগ্য উৎস থেকে শস্য
কেনা সম্ভব। অজানা বিক্রেতা থেকে কিনলে প্রতারণার সম্ভাবনা থাকে বেশি। স্থানীয়
কৃষকদের সমর্থনে বাংলাদেশ অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনার সহজ একটি
নির্ভরযোগ্য উপায়।
৭.স্থানীয় অর্গানিক বাজার ও মেলা অনুসন্ধান
বাংলাদেশের বর্তমানে অনেক জেলায় সাপ্তাহিক অর্গানিক বাজার বা কৃষি পণ্য মেলা
বসে। এই সমস্ত মেলায় বিভিন্ন ইভেন্টে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাঁটি
অর্গানিক খাদ্যশস্য পাওয়া যায়। এগুলোতে অনেক কৃষক সরাসরি তাদের পণ্য নিয়ে
আসেন, যেখানে আপনি শস্য দেখতে, ঘ্রান নিতে এবং সরাসরি প্রশ্ন করার
সুযোগ পাবেন। এই সুযোগগুলো ব্যবহার করলে আপনি এক দিকে সাশ্রয় মূল্যে পণ্য
পাবেন অপরদিকে বাংলাদেশের অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য গুলো চেনার উপায় সমূহ
বিস্তারিত জানতে পারবেন। ফলে আপনার দক্ষতাও বাড়বে।
৮.মাটির গন্ধ পরীক্ষা করা
অর্গানিক খাদ্যে সাধারণত হালকা, মাটির স্বাদযুক্ত ও সতেজ হয়। কৃত্রিমভাবে
উৎপাদিত খাবারে কখনো অতিরিক্ত মিষ্টতা বা ঝাঁঝালো ভাব থাকে। একবার যদি আসল
অর্গানিক খাবার খেয়ে ফেলেন, তখনই এর পার্থক্য বুঝতে
পারবেন। অর্গানিক শাকসবজি বা শস্যে প্রায়ই মাটির হালকা গন্ধ
থাকে, যা প্রাকৃতিক উৎপাদনের লক্ষণ হিসাবে পরিগনিত
হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে-অর্গানিক গাজর বা আলুতে মাটির গন্ধ
থাকতে পারে, যা রাসায়নিক যুক্ত পণ্যে থাকে না। বাংলাদেশের গ্রামীণ বাজারে
এই ধরনের সবজি সহজেই পাওয়া যায়। এই গন্ধ সাধারণত ধোয়ার পরও কিছুটা থেকে
যায়। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হলে সবজি হাতে নিয়ে গন্ধ শুকিয়ে দেখতে হবে। তবে
এটি শুধুমাত্র তাজা সবজির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৯.পানিতে ভাসিয়ে বা ভিজিয়ে পরীক্ষা পদ্ধতি
বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনার সহজ উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি ঘরোয়া পদ্ধতি ও প্রাচীন উপায়। বাংলাদেশের গৃহিণীরা অর্গানিক খাবার যাচাই করতে সাধারনত বাড়ীতে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকেন। কিছু অর্গানিক সবজি বা ফল পানিতে ভাসানোর মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়। উদাহরণস্বরূপ অর্গানিক আলু বা গাজর পানিতে ডুবে যায়, যেখানে রাসায়নিক যুক্ত সবজি প্রায়ই ভেসে থাকে। এটি কৃত্রিম উপাদান বা পানির পরিমাণ এর কারনে হয়। তবে এই পরীক্ষা সব ধরনের সবজির জন্য প্রযোজ্য নয়। তবে চাল, ডাল বা মসলা জাতীয় খাদ্য পানিতে দিলে যদি উপরের দিকে ভেসে ওঠে বা পানি ঘোলা হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেখানে অতিরিক্ত পালিশ বা রাসায়নিক থাকতে পারে।বিশেষ করে নকল চাল বা মসুরের ডাল এভাবে সহজেই ধরা পড়ে। অন্যদিকে-অর্গানিক শস্য পানিতে ভিজালে তার গুণগত অবস্থা বদলায় না এবং তেমন কোন রং বা গন্ধ পানিতে মিশে যায় না। বিশেষ করে চিনি, হলুদ মসুর ডাল এগুলো এই পদ্ধতিতে ভালোভাবে পরীক্ষা করা যায়।
১০.শেল্ফ লাইফ পরীক্ষা করা
অর্গানিক খাবারে শেল্ফ লাইফ সাধারণত কম হয় কারণ এগুলোতে কৃত্রিম প্রিজারভেটিভ
ব্যবহার করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ, অর্গানিক শাকসবজি বা ফল
কয়েকদিনের মধ্যে নষ্ট হতে শুরু করে, যেখানে রাসায়নিক যুক্ত খাবার
দীর্ঘদিন টাটকা থাকে। বাংলাদেশের বাজারে অর্গানিক টমেটো বা পালং শাক দ্রুত
শুকিয়ে বা নরম হয়ে যায়। তবে সঠিক সংরক্ষণের পদ্ধতি এই সময়টাতে কিছুটা
প্রভাবিত করতে পারে।তাহলে এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলে বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও
খাদ্যশস্য সহজে সনাক্ত করা যায়। এই পদ্ধতিতে বাড়িতে খাবার সংরক্ষণের
সময় সহজেই প্রয়োগ করা যায়।
আরো পড়ুনঃ
১১.রান্নার করে পরীক্ষা করা
বাংলাদেশে অর্গানিক খাবার বা খাদ্যশস্য চেনার অন্যতম সহজ উপায় হল রান্নার সময় পরীক্ষা করা। অর্গানিক শাকসবজি বা খাদ্যশস্য সাধারণত দ্রুত সেদ্ধ হয় কারণ এগুলোতে কীটনাশক বা ফরমালিনের মত রাসায়নিক থাকে না। উদাহরণস্বরূপ অর্গানিক আলু বা বেগুন রান্না করতে কম সময় লাগে, যেখানে রাসায়নিক যুক্ত খাবার সেদ্ধ হতে বেশি সময় নেয়। এই পার্থক্যটি লক্ষ্য করলে সহজেই অর্গানিক খাবার সনাক্ত করা যায়। তবে রান্নার সময় ছাড়াও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের দিকেও নজর দিতে হবে। এই পদ্ধতি বাংলাদেশের গৃহিনীদের জন্য খুবই সহজ এবং কার্যকর। অর্গানিক শাকসবজিতে রান্নার সময় সাধারণত কম লাগে। আবার অর্গানিক চাল ডালের ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। তবে আগে থেকে ভিজিয়ে রাখলে কম সময় লাগবে। অর্গানিক মাংসের ক্ষেত্রে মাঝারি সময় লাগতে পারে।
১২.ফল বা সবজির ওজন পরীক্ষা
অর্গানিক ফল বা সবজি সাধারণত তুলনামূলকভাবে হালকা হয়। কারণ এগুলোতে
কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ, অর্গানিক আপেল বা
বেগুন হাতে নিলে হালকা অনুভূত হয়। রাসায়নিক যুক্ত ফল বা সবজি পানি বা
অন্যান্য উপাদানের কারণে ভারী হতে পারে। বাংলাদেশের বাজারে এই পদ্ধতি
প্রয়োগ করে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য সহজে সনাক্ত করা
যায়। তবে, ওজন পরীক্ষার জন্য অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
১৩.স্বাভাবিক মেয়াদ ও সংরক্ষণ পদ্ধতি
অর্গানিক খাবারের প্রাকৃতিক মেয়াদ সাধারণত কম হয়। অতিরিক্ত সংরক্ষিত বা অনেকদিন ফ্রেশ থাকা পণ্য সন্দেহজনক। কেমিক্যাল বা কৃত্রিম সংরক্ষণ উপাদান থাকলে খাদ্য অনেক দিন নষ্ট না হয়ে থাকতে পারে। অর্গানিক পণ্য একটু দ্রুত নষ্ট হলেও সেটি স্বাভাবিক। তাই বেশিদিন সংরক্ষণযোগ্য পণ্য সাবধানে যাচাই করতে হবে। যদি আপনি পণ্য কিনে দেখেন যে এটি বহুদিন অক্ষত অবস্থায় রয়েছে বা কোন পোকামাকড় নেই, তবে সন্দেহ হওয়া স্বাভাবিক। কারণ অর্গানিক শস্যে কীটনাশক বা রাসায়নিক থাকে না তাই সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে পোকা ধরতে পারে। অতএব যে পণ্য অনেক দিন পরও একদম নতুনের মত মনে হয় তা নিয়ে একটু গভীরভাবে ভাবুন।
১৪. অর্গানিক ফুড বা খাদ্যশস্যের দাম মুল্যায়ণ করা
বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনার একটি সহজ উপায় দামের মূল্যায়ন করা।
অর্গানিক শস্য সাধারণত সাধারণ শস্যের তুলনায় দামে বেশি হয়। এর কারণ হলো
অর্গানিক চাষের রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার হয় না। ফলে প্রাকৃতিক
প্রদ্ধতিতে বেশি শ্রম ও সময় লাগে। যদি খুব কম দামে কোন পণ্য অর্গানিক
দাবি করে, তবে তা সন্দেহজনক হতে পারে। অতএব দাম ও মানের ভারসাম্য
বিচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৫. সোশ্যাল মিডিয়া বা ওয়েবসাইটের রিভিউ
বর্তমানে বেশিরভাগ অর্গানিক প্রতিষ্ঠান তাদের ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেইজে
বিভিন্ন তথ্য দেয়।সেখানে গ্রাহকদের রিভিউ অভিজ্ঞতা দেখে বোঝা যায় পণ্যটি
কেমন। বেশি নেতিবাচক রিভিউ থাকলে সাবধান হওয়া উচিত। তবে ভালো ব্র্যান্ডে
গ্রাহক সন্তুষ্টির হার বেশি থাকে। অতএব সোশ্যাল মিডিয়া বা ওয়েবসাইট
এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ফুড ও খাদ্যশস্য সহজে চেনার একটি নির্ভরযোগ্য
পথ।
১৬.সরকারী বা আন্তজার্তিক অনুমোদন
কিছু খাদ্যপণ্য সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই বা আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুমোদন পায়। এ ধরনের অনুমোদন প্রাপ্ত পণ্য সাধারণত নিরাপদ ও যাচাইকৃত হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের, বিএসটিআই বা আন্তর্জাতিক সংস্থার লোগো গুলোর আসলতা যাচাই করতে সরকারি তালিকা বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করা যায়। এ সকল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য গুলো সহজে চিনতে পারবো।
উপসংহার
বাংলাদেশে অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য চেনা অনেক সময় জটিল মনে হলেও, সঠিক জ্ঞান
ও কিছু সহজ কৌশল জানলে কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়। অর্গানিক খাবার যেমন
শরীরের জন্য ভালো, তেমনি পরিবেশের জন্য অনেক উপকারী। উপরোক্ত পদ্ধতি গুলো
প্রয়োগ করে ভোক্তারা ক্ষতিকর রাসায়নিক মুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে পারেন।
আমাদের সবার উচিত অর্গানিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলে সুস্থ জীবন যাপন নিশ্চিত
করা।
লেখকের মন্তব্য ঃ
উপরে উল্লেখিত ১৬টি পদ্ধতি বাংলাদেশ অর্গানিক ফুড ও খাদ্যশস্য শনাক্ত করার জন্য ব্যবহারিক এবং অত্যন্ত সহজ। তবে, কোন একটি পদ্ধতির উপর পুরোপুরি নির্ভর না করে একাধিক পদ্ধতি একসঙ্গে প্রয়োগ করলে ফলাফল আরও নির্ভুল হবে। এই লেখনি আপনাদের নিকট উপস্থাপন করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে - অর্গানিক খাবার মানেই শুধু স্বাস্থ্য নয় বরং নিরাপদ ভবিষ্যৎ। কৃষক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত সবাই যদি একটু সচেতন হই, তাহলে বাংলাদেশেও বিশুদ্ধ খাদ্য বিপ্লব সম্ভব।চেষ্টা করুন, অধ্যয়ন করুন এবং শেয়ার করুন-তাহলেই পরিবর্তন সম্ভব।
নাহার অর্গানিকের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url